AL-USWUL ATH-THALATHA
:اعْلَمْ رَحِمَكَ اللهُ أَنَّه يَجِبُ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَمُسْلِمَةٍ، تَعَلُّمُ هَذِهِ الثَّلاثِ مَسَائِل، والْعَمَلُ بِهِنّ
الأُولَى: أَنَّ اللهَ خَلَقَنَا، وَرَزَقَنَا، وَلَمْ يَتْرُكْنَا هَمَلا، بَلْ أَرْسَلَ إِلَيْنَا رَسُولاً، فَمَنْ أَطَاعَهُ دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَاهُ دَخَلَ النَّارَ
:وَالدَّلِيلُ قَوْلُهُ تَعَالَى
{إِنَّا أَرْسَلْنَا إِلَيْكُمْ رَسُولًا شَاهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَا أَرْسَلْنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولًا فَعَصَىٰ فِرْعَوْنُ الرَّسُولَ فَأَخَذْنَاهُ أَخْذًا وَبِيلًا}
الثَّانِيَةُ: أَنَّ الله لا يَرْضَى أَنْ يُشْرَكَ مَعَهُ أَحَدُ فِي عِبَادَتِهِ، لا مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ
:وَالدَّلِيلُ قَوْلُهُ تَعَالَى
{وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا}
الثَّالِثَةُ ُ: أَنَّ مَنْ أَطَاعَ الرَّسُولَ، وَوَحَّدَ اللهَ لا يَجُوزُ لَهُ مُوَالاةُ مَنْ حَادَّ اللهَ وَرَسُولَهُ، وَلَوْ كَانَ أَقْرَبَ قَرِيبٍ
:وَالدَّلِيلُ قَوْلُهُ تَعَالَى
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَـٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّـهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَـٰئِكَ حِزْبُ اللَّـهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّـهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
মনে রেখো, (আল্লাহ্ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন!) চারটি বিষয়ের জ্ঞানলাভ করা আমাদের সবার জন্যই অবশ্য কর্তব্য।
(এক) ইলম বা দ্বীনী জ্ঞান: আর তা এমন বিদ্যা যার সাহায্যে দলীল-প্রমাণসহ আল্লাহ, তাঁর নবী এবং দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে সম্যক পরিচয় লাভ করা যায়।
(দুই) ঐ জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা।
(তিন) তার দিকে (মানুষকে) আহ্বান করা।
(চার) এই কর্তব্য পালনে সম্ভাব্য কষ্ট ও বিপদ-বিপর্যয়ে ধৈর্য ধারণ। উপরোক্ত কথার প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣]
“কালের শপথ, সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ সম্পাদন করেছে, আর যারা পরস্পরকে হক্ক তথা সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং ধৈর্য ধারণের নিরন্তর উপদেশ দিয়েছে তারা ব্যতীত।” [সূরা আল-আসর: ১-৩]
উপরে বর্ণিত সূরা সম্পর্কে ইমাম শাফে‘ঈ (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) এই অভিমত পেশ করেছেন,“যদি আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির উপর প্রমাণ পেশ করার জন্য এ সূরা ছাড়া অন্য কোনো কিছু অবতীর্ণ না করতেন, তাহলে এ সূরাই তাদের জন্য সব দিক দিয়ে যথেষ্ট হতো।”
ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি তার সংকলিত সহীহ বুখারীর একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন: ‘বিদ্যার স্থান হচ্ছে কথা ও কাজের পূর্বে।’
এর সমর্থনে কুরআনের ঘোষণাঃ
﴿فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۢبِكَ﴾ [محمد: ١٩]
“কাজেই জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনোই ইলাহ নেই। আর (হে রাসূল) নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।” (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯)
এখানে কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান ও বিদ্যার কথাই আল্লহ প্রথমে উল্লেখ করেছেন।
জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ে জ্ঞানলাভ এবং সেই মতে কাজ করা অবশ্য কর্তব্য।
এ তিনটি বিষয় হচ্ছে,
এক. আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, জীবিকা প্রদান করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে কোনো দায়িত্বহীনভাবে ছেড়ে দেননি। (বরং হেদায়াতের জন্য) তিনি আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন। যে ব্যক্তি তাঁর আদেশ পালন করবে তার বাসস্থান হবে জান্নাত এবং যে ব্যক্তি তাঁর আদেশ অমান্য করবে তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। এর প্রমান হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ رَسُولٗا شَٰهِدًا عَلَيۡكُمۡ كَمَآ أَرۡسَلۡنَآ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ رَسُولٗا ١٥ فَعَصَىٰ فِرۡعَوۡنُ ٱلرَّسُولَ فَأَخَذۡنَٰهُ أَخۡذٗا وَبِيلٗا ١٦ ﴾ [المزمل: ١٥، ١٦]
“নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের উপর সাক্ষীস্বরূপ, যেমন পাঠিয়েছিলাম একজন রাসূল ফের‘আউনের প্রতি। কিন্তু ফের‘আউন সেই রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলো। ফলে আমরা তাকে পাকড়াও করলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে।” (সূরা আল-মুয্যাম্মিল: ১৫-১৬)
দুই. ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রে আল্লাহ কাউকেই তাঁর অংশীদার বা শরীক হিসেবে পছন্দ করেন না- চাই তা কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা হোন কিংবা কোনো প্রেরিত রাসূলই হোন না কেন। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
“নিশ্চয়ই সিজদার স্থানসমূহ কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য, অতএব আল্লাহর সহিত অন্য কাউকে আহ্বান করো না। (সূরা আল-জিন, ১৮)
তিন: যারা রাসূলের আনুগত্য করেন এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁদের পক্ষে এমন লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা মোটেই জায়েয নয়, যারা আল্লাহ ও রাসূলের বিরূদ্ধাচরণকারী। ঐ লোকেরা যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও হয়, তথাপিও নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿ لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٖ مِّنۡهُۖ وَيُدۡخِلُهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ أُوْلَٰٓئِكَ حِزۡبُ ٱللَّهِۚ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢ ﴾ [المجادلة: ٢٢]
“আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপরে ঈমান পোষণকারী এমন কোনো সম্প্রদায়কে আপনি পাবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। হোক না কেন তারা ঈমানদারদের পিতা, পুত্র বা ভ্রাতা কিংবা গোত্র- গোষ্ঠী। আল্লাহ এদের হৃদয়ে ঈমানকে শক্তিশালী করে রেখেছেন এবং তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত (ফেরেশতা তথা) আত্মিক শক্তি দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করে দেবেন যার নিম্নদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী, সেখানে তারা অবস্থান করবে চিরকাল। আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন তাদের উপর এবং তারাও সন্তুষ্ট আল্লাহর উপর। বস্তুত এরাই হচ্ছে আল্লাহর সেনাদল। জেনে রাখো, আল্লাহর এই সেনাদলই হবে পরিণামে সফলকাম।” (সূরা আল-মুজাদালাহ্ঃ ২২)
[হানীফিয়্যাহ তথা নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করাই হচ্ছে মিল্লাতে ইবরাহীম বা ইবরাহীমের আদর্শ নীতি]
জেনে রাখো- (আল্লাহ তাঁর আনুগত্য বরণ ও আদেশ পালনের জন্যে তোমাকে পথ প্রদর্শন করুন) নিশ্চয় একনিষ্ঠ আনুগত্যই হল মিল্লাতে ইবরাহীমের মূলকথা। তা এই যে তুমি কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং কেবলমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে খালেস করবে। আর আল্লাহ সকল মানুষকে এরই আদেশ দিয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]
“আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা আয- যারিয়াত: ৫৬)
‘তারা আমারই ইবাদত করবে’-এর অর্থ, তারা আমার তাওহীদ তথা (রবুবিয়াত ও ইবাদতে) একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করবে। মূলকথা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ আদেশ হচ্ছে ‘তাওহীদ’।
আর আল্লাহর সর্ববৃহৎ নির্দেশটি হচ্ছে তাওহীদ। যার অর্থ সর্বপ্রকারের ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। পক্ষান্তরে তাঁর বড় নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে শির্ক। তার অর্থ, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে আহ্বান করা। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ ﴾ [النساء: ٣٦]
“এবং তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে, অন্য কোনো কিছুকেই তাঁর সঙ্গে শরীক করবে না।” (সূরা আন নিসা: ৩৬)