প্রশ্ন: শিরক কি? শিরকের ভয়াবহতা ও তার দলীল কি?

উত্তর:-------------- 

১। শিরক হল তাওহীদের বিপরীত। শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। শিরককারী ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ তাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন ঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
অর্থঃ নিশ্চই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহা পাপ রচনা করে। (সূরা নিসাঃ ৪৮ ও ১১৬)

অর্থাৎ তওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ চাইলে অন্যান্য সকল পাপ ক্ষমা করলে করতেও পারেন; কিন্তু শিরকের পাপ তিনি কাউকেই ক্ষমা করবেন না।


২। শিরককারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহর জান্নাত চিরতরে হারাম ঃ সে অনন্তকাল জাহান্নামে শাস্তিভোগ করবে। কোন পীর-মুরশিদ, দরবেশ-ফকির, মাযার বা মুর্তি কেউ তাকে সাহায্য করে জান্নাম থেকে বাঁচাতে পারবে না। আল্লাহ বলেন ঃ
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ }المائدة৭২
অর্থঃ নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা জান্নাম। আর যালিমদের (শিরককারীদের) জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (আল মাইদাহঃ৭২) অর্থাৎ অন্যান্য পাপের শাস্তিভোগ করার পর এক দিন না এক দিন মুমিন বান্দা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে হান্নাতে যাবে; কিন্তু শিরককারীরা কখনই জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না। জাহান্নামই তাদের শেষ ও এক মাত্র ঠিকানা।

৩। শিরকি আমল এর পাশাপাশি যদি নেক আমলও থাকে? ঃ শিরক করার পাশাপাশি যদি নেক আমল এবং বিশুদ্ধ ইবাদ করা হয় তাহলে সেই ইবাদত গুলোর অবস্থা কি হবে? এর জবাবটা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন-এভাবে ঃ
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاء مَّنثُوراً / الفرقان২৩
অর্থঃ তাদের আমলের প্রতি আমি অগ্রসর হয়ে সে গুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিনত করে দেব। (আল ফুরকানঃ২৩)

বি:দ্র: هَبَاء مَّنثُوراً “হাবা আম্ মানছূরা” বলা হয় ঐ বিক্ষিপ্ত ধুলিকনাকে যা খোলা যানালা দিয়ে প্রবাহিত রোদের কিরণের মধ্যে উড়ে বেড়াতে দেখা যায় কিন্তু হাত বাড়ালে তা ধরা যায় না। শিরককারীদের মূল্যবান নেক আমল গুলো শেষ বিচারের দিনে অনুরূপ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে এবং তাদের কোন কাজে আসবে না।


৪। শিরক করলে বড়বড় পীর-বুযর্গদেরও রক্ষা নেই ঃ সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা; নবী-রাসূলগণও যদি শিরক করতেন তাহলে তাদেরও রক্ষা ছিলনা। আল্লাহপাক সূরা আনআমের মধ্যে ১৮ জন নবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ করার পর বলেছেনঃ
َلَوْ أَشْرَكُواْ لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ / الأنعام৮৮
অর্থঃ তাঁরাও যদি শিরক করতেন তাহলে তাঁদেরও যাবতীয় আমল বরবাদ হয়ে যেত। ( সূরা আন আমঃ৮৮) সুতরাং যে সকল গুরু ভায়েরা শিরকের পাঠ দান করে থাকেন তারা একটু ভেবে দেখবেন?

৫। শুধু অন্যান্য নবীদেরকেই নয়; বরং সর্বশেষ নাবী, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, সকল নাবী-রাসূলগণের সর্দার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাহল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকেও আল্লাহ তায়ালা কঠোর ভাবে শিরক থেকে সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন ঃ
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ /الزمر৬৫
অর্থঃ তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক কর তাহলে তোমার আমল অবশ্যই নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতি গ্রস্থদের অর্ন্তভূক্ত। (সূরা যুমারঃ৬৫, আরো দেখুন সূরা ইউনুসঃ১০৬) সুতরাং তাঁর চাইতে বড় বুজর্গ আর কে আছে?


আমরা জানি যে, নবী বা রাসূলগণের কখনোও শিরক করার সামান্যতমও সম্ভাবনা থাকে না। তথাপী তাঁদেরকে উক্ত রূপ কঠোর হুমকি দেয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি?

উত্তরঃ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হল: শিরকের ভয়াবহতা উম্মত যেন বুঝতে পারে।

৬। শিরক সব থেকে বড় পাপ, এই পৃথিবীতে শিরকের থেকে বড় কোন পাপ নাই ঃ উপরের দলীলগুলো থেকে ইতি মধ্যেই যদিও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে, তথাপি একটি হাদিছের ভাষ্য কোন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ  বলেন; ইয়া রাসূলাল্লাহ! সব চাইতে বড় পাপ কোনটি? রাসূলুল্লাহ  বললেনঃ যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তার সাথে শরীক করা। (বুখারী,মুসলিম, মিশকাত-করাচী ছাপা ৪৯পৃঃ)


৭। শিরক থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দুয়া করা উচিৎ ঃ এ জন্য হযরত ইবরাহীম আঃ আল্লাহর কাছে কাতর কন্ঠে ফরিয়াদ করেছেন এই বলে ঃ وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الأَصْنَامَ }إبراهيم৩৫ অর্থঃ হে আল্লাহ আমাকে ও আমার পুত্রকে তুমি মূর্তি পুজা হতে বাঁচাও। (সূরা ইবরাহীমঃ৩৫)


শুধু কি তাই! বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ  নিজেও শিরক থেকে বাঁচার জন্য বিনীত ভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন এই বলেঃ
اللهم إني أعوذ بك أن أشرك بك و أنا أعلم و أستغفرك لما لا أعلم
অর্থঃ হে আল্লাহ! জ্ঞাতসারে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আর অজ্ঞাতসারে শিরক করে ফেললে তা থেকে তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (হাদীছ সহীহ, দেখুন- সহীহ ও যয়ীফ জামে সগীর, হা নং ৬০৪৪)

সম্মানিত ভাই ও বোনেরা! 

জাতীর পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এবং সর্বকালের ও সর্ব যুগের মহামানব মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজেই যদি শিরক থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকেন, তাহলে তাদের দুজনের চেয়ে আর কে নিজেকে শিরক থেকে অধিক নিরাপদ মনে করতে পারে? তাই শিরক থেকে প্রতিদিন আল্লাহর কাছে আমাদের দুয়া করা উচিৎ নয় কি?