আক্বীদাহ

نَحْمَدُهُ وَنُصَلِّــــــيْ عَلَـــــى رَسُـــــــــــوْلِهِ الْكَرِيْــمِ

১. আক্বীদাহ মানে কী?

উত্তর: আকিদা মানে বাঁধা, বন্ধন, গিরা ইত্যাদি।

২. আক্বীদাহ কাকে বলে?

উত্তর: মানুষের দৃঢ় বিশ্বাসকে আক্বীদাহ বলে; যেখানে কোন সন্দেহ থাকে না।

মনে রাখতে হবে:

যেহেতু প্রতিটি মানুষ তার গভীরতম বিশ্বাসের সাথে বাঁধা, অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ যা কিছু করে সবই তার বিশ্বাসের আলোকে করে, তাই মানুষের দৃঢ় বিশ্বাসকে আক্বীদাহ বলে।

৩. আক্বীদাহ কয় প্রকার ও কি কি?

উত্তর: আক্বীদাহ দু’প্রকার:

সহীহ আক্বীদাহ ও বাতিল আক্বীদাহ ।

৪. সহি আক্বীদাহ ও বাতিল আক্বীদাহ কাকে বলে? 

উত্তর: যে আক্বীদার পক্ষে কোরআন এবং হাদীসের দলীল আছে তাকে সহীহ আক্বীদাহ বলে এবং যে আক্বীদার পক্ষে কোরআন এবং হাদীসের দলীল নেই তাকেই বাতিল আক্বীদাহ বলে।

উল্লেখ্য যে, সহীহ আক্বীদাহকেই ইসলামী আক্বীদাহ বলে। 

৫- ইসলামী আকীদা বলতে কী বুঝায়?

এ সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:

“ইসলামী আকীদা হল, সেই চেতনা ও বিশ্বাসের নাম যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন।  নাযিল করেছেন অনেক আসমানী কিতাব।  

মহান আল্লাহ সমগ্র মানুষ ও জিন জাতির উপর সেই আক্বীদাহ বা বিশ্বাস পোষাণ করা অপরিহার্য করেছেন।

🔸 যেমন আল্লাহ বলেন:

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ- مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ

“এবং আমি জিন ও মানুষ জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন জীবিকা চাইনা এবং চাইনা যে তারা আমাকে খাদ্য দান করুক।”  (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬-৫৭) 

তিনি আরও বলেন :

  وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ

 “এবং তোমার প্রতিপালক চূড়ান্ত ফায়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না।” (সূরা ইসরাঃ ২৩)

তিনি আরও বলেন:

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

“এবং আমি প্রত্যেক জাতির নিকট এ মর্মে রাসূল পাঠিয়েছে যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (তথা আল্লাহ ছাড়া যে সকল জিনিসের ইবাদত করা হয়) সেগুলো থেকে দূরে থাক।” (সূরা আন নাহল: ৩৬)

উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে এ কথা স্পষ্ট  যে, সমস্ত নবী-রাসূল এ আকীদার আহবান নিয়ে পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন।  সমস্ত আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল এ আকীদারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য এবং এর বিপরীত সকল বাতিল বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণাকে অপনোদন করার জন্য।

মানব জগতের প্রত্যেককে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তিকে এই আকীদা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। 

৬- সহীহ আক্বীদার গুরুত্ব কি? 

সহীহ আক্বীদার এত বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদা যে সেটি সব কিছুর আগে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করার।  কারণ,এর উপরই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের  সৌভাগ্য ও সাফল্য নির্ভর করছে। আল্লাহ বলেন:

فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا

অর্থঃ “সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল সে যেন শক্ত হাতল মজবুতভাবে ধারণ করল যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।” (সূরা বাকারাঃ ২৫৬) 

একথার মানে হল, যে এ আকীদা হতে হাত গুটিয়ে নিবে সে অলীক-কল্পনা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। কারণ, সঠিক পথ ছেড়ে দিলে সেখানে গোমরাহী ছাড়া অন্যকিছু থাকতে পারেনা।

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ

অর্থঃ তা এ জন্যে যে, আল্লাহই তো প্রকৃত সত্য আর তাঁকে ছাড়া ওরা যা কিছু আহবান করে তা ভ্রান্ত । 

(সূরা হজ্জঃ ৬)”

উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান, 

আকীদার গ্ররুত্বে আরো দলীল:

ঈমান-আকীদা শুদ্ধ না হলে নামায-রোযা সহ কোন ইবাদই আল্লাহর নিকট গ্রহনীহ হবে না।  যেমন কেউ যদি শিরকী আকীদা পোষণ করে তাহলে যত ইবাদতই করুক না কেন সব কিছুই বিফলে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: 

  لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ 

“যদি শিরক করো তবে তোমার সকল আমল  নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবে।” (সূরা যুমার: ৬৫)

ঈমান, ইখলাস ও রাসুল সা. এর অনুসরণ (যেগুলো আকীদার মূল ভিত্তি) এর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকলে আখিরাতে সকল নেককাজ ধুলিকনার মত অর্থহীন হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُورًا

“আমি তাদের কৃতকর্মের নিকট আগমন করে সেগুলোকে উৎক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব।” (সূরা ফুরকান ২৩)

ইসলামী আকীদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আকীদা বলতে কী বুঝায়, আকীদার উপর আর কী কী জনিসি নির্ভর করে,  বিপরীত আকীদাগুলো কী কী, কী কারণে আকীদা নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যমেন বড় শিরক, ছোট শিরক ইত্যাদি বষিয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অরহার্য।   আল্লাহ বলেন:

فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ

“অতএব, জেনে রাখ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নাই। এবং তোমার গুনাহর জন্য তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”

ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায়ের শিরনাম রচনা করেছেন এভাবেঃ

بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ

“অধ্যায়ঃ কথা বলা এবং আমল করার আগে জ্ঞানার্জন করা।”

এরপর তিনি এ শিরনামের স্বপক্ষে পূর্বোক্ত আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হল যে, ঈমান ও  আকীদা সঠিক না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য নেক আমলের কোনই মুল্য নাই। তাই আমল সংশোধনের পূর্বে আকীদা সংশোধ করা এবং সে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক।  

আল্লাহু আ’লাম। 

৭. আক্বীদার মূল ভিত্তি গুলো কী কী?

উত্তর: আক্বীদার মূল ভিত্তি ৬টি -

ক্সআল্লাহকে বিশ্বাস করা 

ক্সআল্লাহর ফেরেশতা বিশ্বাস করা 

ক্সতাঁর কিতাব বিশ্বাস করা 

ক্সনবী-রাসূল বিশ্বাস করা

ক্সআখেরাত বিশ্বাস করা

ক্সভাগ্যের ভালো মন্দ বিশ্বাস করা

এগুলোকেই ঈমানের রুকন বলা হয়।

৮. সহীহ আক্বীদার উৎস কী? 

উত্তর: সহীহ আক্বীদার উৎস হলো কুরআন ও সহীহ হাদীছ।  কুরআন ও সহীহ হাদীছে নেই এমন কোন আক্বীদাহ গ্রহণ করা মুসলিমের জন্য জায়েয নেই।

৯. সহীহ আক্বীদার উপকারীতা কী?

উত্তর: আল্লাহর যে উদ্দেশ্যে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তা বুঝা এবং বাস্তবায়ন করা।  ফলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং জান্নাত দান করবেন। 

(তাওহীদের উপর টিকে থাকা সহজ হবে এবং শিরক থেকে বেঁচে তাকা সম্ভব হবে।)

আল্লাহ ভাল জানেন